স্বাস্থ্যবান মানুষ দিনে ২৫ হাজারবার শ্বাস নেয় শ্বাস নেয়া ও ছাড়ার কাজে ফুসফুসের বিকল্প নেই। বাতাস থেকে অক্সিজেন রক্তপ্রবাহে নেয়া ও রক্তপ্রবাহ থেকে অক্সিজেন বাতাসে ছেড়ে দেয় ফুসফুস।কাজেই ফুসফুসের কাজ অবিরাম চলতে থাকে, কখনোই যেন এর বিরাম নেই। তাই সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে ফুসফুসও রাখতে হবে স্বাস্থ্যকর। আর এজন্য এগারটি সহজ অভ্যাস গড়ার পরামর্শ রইল।
১. পাকস্থলি থেকে শ্বাস নিন
সাইক্লিংসহ বেশকিছু খেলাধূলায় মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশি শক্তিশালী হয়। তবে সমীক্ষায় দেখা গেছে, কিছু ব্যায়ামও নিঃশ্বাসের গতি বাড়াতে পারে। এজন্য দিনে অন্তত পাঁচ মিনিট পাকস্থলি থেকে শ্বাস নেয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
এ ধরনের শ্বাস নেয়ার সময়ে ফুসফুসে বাতাস ঢুকবে ও পেট সম্প্রসারিত হয়। এতে আপনার বক্ষ ও উদরের মধ্যবর্তী অর্থাৎ বুকের পাজড়ের ভেতরের পেশি বেশ শক্তিশালী হবে, নিঃশ্বাস গ্রহণ সহজতর হবে। শ্বাস-প্রশ্বাসের হারও বেড়ে যাবে। অক্সিজেনের চাহিদা কমবে।
২. ধূমপান ত্যাগ করা
ধূমপায়ীদের কাছে এই কথাটি শুনতে হয়তো বিরক্তই লাগে। কেননা অধিকাংশ ধূমপায়ীই জানেন ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলোর কথা। ধূমপান ছেড়ে দিতে পারেন না বেশির ভাগই। তারপরও একটু ভাবুন তো, এই একটি মাত্র অভ্যাস ছেড়ে দিলে কতগুলো রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন আপনি। ধূমপান বন্ধ করলে ফুসফুসের ক্যানসার, সিওপিডির মতো কঠিন রোগগুলোর হাত থেকে অনেকটাই রেহাই পাওয়া যায়।
ধূমপান করলে শ্বাসনালি সরু হয়ে যায়। এতে শ্বাসকষ্ট হয়। ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ ও ফোলাভাব তৈরি হয়। ধূমপান ফুসফুসের টিস্যুগুলোকে নষ্ট করে দেয়। পরবর্তীকালে এটি ফুসফুসের ক্যানসারে রূপ নেয়। আপনি যদি কিডনি অথবা ফুসফুসের কোনো সমস্যায় ভোগেন, তবে দ্রুত ধূমপান ছেড়ে দিন।
৩. নিয়মিত আপেল খাবেন
ইংরেরিতে একটি প্রবাদ আছে, অ্যান অ্যাপল এ ডে, কিপ দ্য ডক্টর এওয়ে অর্থাৎ দিনে একটি আপেল খান আর চিকিৎসককে দূরে রাখুন। ঢাকায় এখন সহজলভ্য ফলগুলোর মধ্যে আপেল অন্যতম। শহরের এমন একটি অলি কিংবা গলি খুজেঁ পাবেন না, যেখানে হকাররা আপেল নিয়ে বসে নেই।
এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচটির বেশি আপেল খেলে মানুষের ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ে। এতে শ্বাস গ্রহণের সময়ে বুকে শনশন শব্দের প্রবণতা হ্রাস পায়। অ্যাজমার মতো বেশকিছু রোগ থেকেও আপনি নিরাপদ থাকতে পারবেন।
৪.পরোক্ষ ধূমপান এড়িয়ে যাওয়া
একজন ধূমপায়ী কেবল নিজেরই ক্ষতি করেন না, আশপাশে যাঁরা থাকেন তাঁদেরও ক্ষতি করেন। ধূমপান না করেও যাঁরা ধূমপায়ীদের কাছাকাছি থাকেন বা ধূমপানের সময় আশপাশে থাকেন তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত হন। একে পরোক্ষ ধূমপান বলা হয়। এতেও ফুসফুসের ক্ষতি হয়। তাই ঘরে, কর্মক্ষেত্রে ও গাড়িতে কেউ ধূমপান করলে তাঁকে মানা করুন এবং নিজেও ধূমপান থেকে দূরে থাকুন।
৫. জীবনের উজ্জ্বল স্মৃতিগুলো স্মরণ করুন
হার্ভাডের গবেষকরা ৬৩ বছর বয়সের ৬শ’ সত্তর জন লোকের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন। প্রায় আট বছর ধরে চালানো এই গবেষণায় দেখা গেছে, ফুসফুসের সক্ষমতার দিক থেকে আশাবাদী লোকগুলো অনেক ভালো আছে।
হতাশাপ্রবণতা মানুষের ফুসফুসের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই, জীবনের সুখের ও উজ্জ্বল দিনগুলোর কথা স্মরণ করুন। এতে আপনার নৈরাশ্য কেটে যাবে, ফুসফুস বেশি বেশি কার্যকর ও সচল থাকবে। ব্রিটেনে আড়াই হাজার লোকের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে,যারা আপেল খেতে অপছন্দ করেন, তাদের ফুসফুক খুব দুর্বল থাকে। বরং তাদের তুলনায় আপেল খেকোদের ফুসফুসই বেশি কার্যকর।
৬. বায়ুদূষণ থেকে দূরে থাকুন
ধূমপানের মতো দূষিত বায়ুও ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর। কলকারখানার ব্যবহৃত বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, যানবাহনের ধোঁয়া এর জন্য দায়ী। তাই বায়দূষণ হয় এমন বাণিজ্যিক এলাকায় থাকবেন না। সুস্থ থাকতে সাইকেল চালানোর অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
৭.ক্লিনারের গায়ে ক্ষুদ্রাক্ষরে ছাপা নির্দেশনা পড়ুন
গৃহস্থালি ঝকঝকে রাখতে নানা রকম পরিষ্কারের বস্তু বা ক্লিনার ব্যবহার করতে হয়। যেমন অভেন ক্লিনার। এসব ক্লিনার বিষাক্ত হতে পারে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে এসব বিষ ফুসফুসে চলে গেলে আপনি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
তাই ব্যবহারের আগেভাগেই ক্লিনারের গায়ে লেখা ক্ষুদ্রাক্ষরের নির্দেশনাগুলো পড়ুন। নির্দেশনায় লেখা থাকতে পারে, ব্যবহারের সময়ে ঘরের জানলা খোলা রাখুন। আপনি তখন নির্দেশনামতো জানলা খোলা রেখে ব্যবহার করবেন। এরকম অন্য কোনো নির্দেশনাও থাকতে পারে। কোনোভাবেই নির্দেশনা অমান্য করে ক্লিনার ব্যবহার করবেন না।
৮. ঘরে গাছ রাখুন
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরে গাছ থাকলে বায়ু পরিশোধিত হয়। ঘরে ১০০ স্কয়ার ফুটের মধ্যে দুটি গাছ রাখুন। এর পটের আকার হতে পারে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে। তবে এর আগে জেনে নেবেন কোন গাছগুলো ঘরে রাখার উপযোগী। ঘরে রাখার জন্য ভালো হলো ফার্ন, স্পাইডার প্ল্যান্ট, পিস লিলি, ব্যাম্বো প্ল্যাম, অ্যালোভেরা ও ইংলিশ আইভি ইত্যাদি গাছগুলো।
এ ছাড়া ঘরের মধ্যে মশা তাড়ানোর জন্য কোনো স্প্রে ব্যবহার করবেন না। ঘরে যেন পর্যাপ্ত আলোবাতাস ঢোকে সে ব্যবস্থা করুন।
৯.স্বাস্থ্যকর খাবার খান
ফুসফুসকে ভালো রাখতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খান। রসুন, পেঁয়াজ, আদা, হলুদ, আপেল, গ্রিন টি ইত্যাদি খাদ্যতালিকায় রাখুন। ফুসফুসের পেশিকে ভালো রাখতে দুধ, পনির, মাছ, বাদাম এসব খাবার খাদ্যতালিকায় রাখুন। পাশাপাশি চিনি জাতীয় খাবার, কার্বোহাইড্রেট, কেক, সফট ড্রিংকস খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিন। এতে কেবল ফুসফুসই নয়, সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যই ভালো থাকবে।
১০.শুভ্র ওয়াইন সেবন করুন
সব ধরনের ওয়াইন আপনার ফুসফুসের জন্যে ভালো। বিশেষ করে শুভ্র ওয়াইন, যেটা ফুসফুসের সক্ষমতা বাড়ায় ও স্বাস্থ্যকর রাখে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই ওয়াইনের মধ্যে বেশকিছু পুষ্টিকর উপাদান আছে, তা ফুসফুসের কোষসমষ্টিকে কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে। নিউ ইয়র্কে দেড় হাজারেরও বেশি লোকের ওপর চালানো এক গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
শুভ্র ওয়াইন সেবন করে এমন লোকজনের অতীত ও বর্তমান পর্যালোচনা করে বিজ্ঞানীদের ধারণা, সুস্থ ফুসফুসের জন্যে শুভ্র ওয়াইন অপরিহার্য পানীয়। তবে বিডি হেলথ এটিকে সাপোর্ট করেন না।
১১.নিয়মিত ব্যায়াম করুন
ফুসফুসের ধারণক্ষমতা বাড়াতে ব্যায়াম একটি অন্যতম উপায়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে হৃৎপিণ্ড ও পেশিতে অক্সিজেন পরিবহন করতে ফুসফুসের সুবিধা হয়। এতে মেজাজ ও হৃৎপিণ্ড দুটোই ভালো থাকে। ফুসফুস ভালো রাখতে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন।
অ্যাজমা, ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি), ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি ফুসফুসের প্রচলিত রোগ।কিছু জিনিস রয়েছে যেগুলো ফুসফুসের কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে। তবে উপরের বিষয় মেনে চললে ফুসফুসকে ভালো রাখা যায়। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট টপ টেন হোম রিমেডি জানিয়েছে ফুসফুসকে শক্তিশালী ও স্বাস্থ্যকর রাখার বারটি উপায়ের মধ্যে ছয় উপায়ের কথা।